কি হবে যদি ১০ লক্ষ মানুষ একসাথে এরিয়া ৫১ এ আক্রমণ চালায়?
২০১৯ সালে ম্যাটি রবার্টস নামের এক কলেজ ছাত্র ফেসবুকে একটা ইভেন্ট চালু করে। ইভেন্টটির নাম ছিল এরকম- Storm Area 51, They Can’t stop all of us। অর্থাৎ তারা সবাই ঝড়ের গতিতে ভেঙ্গেচুড়ে এরিয়া ৫১ এর ভেতরে যাবে, এবং সেখানে কি আছে তা নিজ চোখে দেখে আসবে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, প্রায় ১৯লক্ষ মানুষ সেই ইভেন্টটিতে ইন্টারেস্ট প্রকাশ করেছিল যে, তারা এরিয়া ৫১ এ আক্রমন চালাতে আগ্রহী। আমাদের এতো মানুষের দরকার নেই।
আমরা যদি একইভাবে সোসিয়াল মিডিয়ার মাধ্যমে অন্তত ১০ লক্ষের মতো মানুষকে একত্র করতে পারি, তাহলে কি এরিয়া ৫১ এর সকল বাধা ভেঙ্গে দেখতে সফল হবো, যে আসলে কি চলছে সেখানে?
ধরুন আমরা আক্রমনের জন্য তৈরী হলাম, এরিয়া ৫১ এ কর্মরত গার্ড কিংবা ডিফেন্স কি আমাদের প্রতিহত করতে পারবে? নাকি না? অথবা ধরুন আমরা সকল বাধা ভেঙ্গে চুড়ে এরিয়া ৫১ এর ভেতর ঢুকেই পড়লাম! কি দেখতে পাবো তারপর?
এরিয়া ৫১। এ জায়গাটি সম্পর্কে আমরা কমবেশি সবাই জেনে থাকবো। যারা প্রথম শুনলেন তাদের জন্য বলছি, এরিয়া ৫১ হচ্ছে আমেরিকার একটি অতি গোপন সামরিক বিমান ঘাটি। আরো বিস্তারিত জানতে আই বাটনে দেয়া আমাদের এই ভিডিওটি দেখতে পারেন। কিন্তু এরিয়া ৫১ কি শুধুই একটা সামরিক ঘাটি? এ প্রশ্নটির উত্তর খুজতে গিয়ে একে ঘিরে এপর্যন্ত তৈরী হয়েছে বহু কন্সপিরেসী। এসব কন্সপিরেসীর মধ্যে- গোপনীয়ভাবে সামরিক অস্ত্রসস্ত্র তৈরী, এলিয়েন প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা এমনকি এখানে এলিয়েন থাকে বলে বিশ্বাস করেন অনেকে। বেশ কিছু দশক ধরে এরিয়া ৫১ শুধুই কন্সপিরেসী থিওরীর অংশ ছিল। কিন্তু এবার কি আপনি সত্যিই জানতে চান এসব কন্সপিরেসী থিওরীগুলোর মধ্যে কোনো একটা সত্য কিনা?
তাহলে চলুন, এবার আমরা ১০ লক্ষ কৌতুহলী মানুষ একসাথে এরিয়া ৫১ এ আক্রমণ চালাবো। এরিয়া ৫১ এর সকল বেড়াজাল গুড়িয়ে দিয়ে নিজ চোক্ষে দেখে আসবো এরিয়া ৫১ নামক রহস্যময় স্থানে আসলে বাস্তবে কি চলছে।
২০১৯ সালে ম্যাটি রবার্টের সেই ইভেন্টে ১৯ লক্ষ মানুষ ইন্টারেস্ট দেখালেও ওই ইভেন্টটি আসলে মজার ছলে করা হয়েছিল। এবং পরবর্তীতে এরিয়া ৫১ এ এরকম কোন আক্রমণই করা হয়নি। কিন্তু কি হতো যদি তাদের এই ইভেন্টটি সফল হতো? এটা জানার জন্য আমরা ১০ লক্ষ মানুষকে ধরে নিয়ে একটি এক্সপেরিমেন্ট চালাবো। আর জানার চেষ্টা করবো, কি হবে যদি এতোগুলো মানুষ একসাথে এরিয়া ৫১ এ আক্রমণ চালায়?
এই মিশনটি সফল করার জন্য প্রথমেই জানতে হবে যে, আপনি এরিয়া ৫১ এ কিভাবে যাবেন।
এরিয়া ৫১ এর সবচেয়ে কাছাকাছি থাকা এয়ারপোর্টটি হচ্ছে লাস ভেগাস শহরে। সেখান থেকে, আপনাকে কয়েক ঘণ্টা ধরে দক্ষিণ নেভাদা মরুভূমির মধ্য দিয়ে ড্রাইভ করে যেতে হবে।
মনে রাখবেন, আপনার মতো আরো ১০ লক্ষ মানুষ ওই একই কাজ করতে যাচ্ছে। এর ফলে লাস ভেগাস থেকে শুরু করে এরিয়া ৫১ এর সরু রাস্তায় একটা তীব্র যানজটের সৃষ্টি হবে।
নেভাদার সবচেয়ে জনবহুল শহর লাস ভেগাসে ৮ লক্ষ মানুষ বসবাস করে। আর সম্পূর্ণ নেভাদা অঙ্গরাজ্যে ৩০ লক্ষ মানুষের বসবাস।
সেখানে আরো ১০ লক্ষ মানুষ যুক্ত হলে, নেভাদার অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আবার অন্যদিকে এরিয়া ৫১-এ যেতে যে রাস্তাটি পড়ে সেটি একটি ধুলাযুক্ত ২ লেনের সরু রাস্তা।
যদি ১০ লক্ষ মানুষ এরিয়া ৫১ এ যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে তাহলে তাদের হয়ত সেখানে পৌছানোটাও অসম্ভব হয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ সবাই ট্রাফিক জ্যামেই আটকে থাকতে পারে কিংবা নানান দূর্ঘটনার সম্মুখীন হতে পারে। এলিয়েন দেখার জন্য এ ধরনের উন্মাদনা সত্যিই একটু বেশি বেশি হয়ে যায়।
আচ্ছা যাই হোক, ধরুন সবাই কোনভাবে এরিয়া ৫১ এর গেটের সামনে উপস্থিত হলো। এবার ১০ লক্ষ মানুষ একসাথে এরিয়া ৫১ এ আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত। কি হবে তারপর?
উল্লেখ্য যে, এই ১০ লক্ষ মানুষের কাছে তো কোন অস্ত্রসস্ত্র নেই। যা করার খালি হাতেই করতে হবে। ডানে বায়ে না তাকিয়ে ঝড়ের গতিতে আক্রমণ চালাতে হবে।
সবাই এরিয়া ৫১ এর বর্ডার ক্রস করে ফেলার পর প্রথমেই সেখানকার সামরিক ঘাটির নিরাপত্তারক্ষীদের সাথে দেখা হয়ে যাবে। এসব নিরাপত্তারক্ষিরা এখানে সার্বক্ষনিক পাহাড়ার কাজে নিয়োজিত থাকে। কেউ এদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করবে, এটা একেবারেই অসম্ভব, আবার এদিকে এরিয়া ৫১ এর দিকে যে লক্ষ লক্ষ মানুষ ছুটে আসছে এ খবরটাও তাদের অজানা নয়।
এরিয়া ৫১ এ কর্তব্যরত গার্ডরাই কিন্তু একমাত্র নিরাপত্তারক্ষী নয়। এতো বড় একটা ইভেন্ট, পৃথিবীর সবাই যে জেনে যাবে এটাই স্বাভাবিক। তাই বিষয়টি গোপনরাখা কোনভাবেই সম্ভব নয়।
আপনি আগে শুনেছেন কিনা জানিনা, এরিয়া ৫১ হচ্ছে এডওয়ার্ডস এয়ার ফোর্স বেসের একটি অংশ যা দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত। হাজার হাজার সক্রিয় সামরিক সদস্য ক্যালিফোর্নিয়ার বিমান ঘাটিতে অবস্থান করে আছে। তাছাড়া এরিয়া ৫১ এর ভেতরে কিসব সামরিক প্রযুক্তি থাকতে পারে সে ব্যাপারেও কিন্তু আমাদের কোন আইডিয়া নেই।
মূহুর্তেই হাজার হাজার সশস্ত্র সৈন্য এবং পুলিশ সদস্যদের একটা বিশাল ডিফেন্স ফোর্সকে চোখের সামনে দেখতে পাবেন আপনি। তাদের কাছে বন্দুক, টেসার, ট্যাঙ্ক এবং আর কি কি অস্ত্রশস্ত্র আছে কে জানে?
সবাই একসাথে এরিয়া ৫১ এ আক্রমণ চালালে, তারা যে এসব অস্ত্রের ব্যবহার করবে না তার কি কোন নিশ্চয়তা আছে? কারণ, প্রথম থেকেই এরা চেয়ে এসেছে এরিয়া ৫১ কে সবচেয়ে গোপন করে রাখার। আর ভবিষ্যতেও এর গোপনীয়তা রক্ষা করার জন্য সবকিছু করবে। তাই নিরস্ত্র জনতাকে প্রতিহত করতে গুলি চালানো থেকে শুরু করে প্রয়োজনে তাদের শক্তিমত্তার সর্বোচ্চ ব্যবহার করবে। এতে বিন্দুমাত্র অবাক হওয়ারও কিছু নেই।
যদি আপনি কোনভাবে বুলেটের আঘাত থেকে বেচেও যান তবুও কিন্তু রক্ষে নেই। আপনি অ্যারেস্ট হবেন।
কিন্তু আপনি যদি যেকোনভাবে সকল গার্ডদের চোখে ধুলো দিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে সক্ষম হন তাহলে?
এরপরেও হয়ত আপনি এরিয়া ৫১ এর মূল বেসে পৌছাতে পারবেন না। কারন মূল বেস টি পেতে হলে আপনাকে অনেক খোজাখোজি করতে হবে।
এরিয়া ৫১ এর মূল এলাকা আসলে ১৫০ বর্গ কিলোমিটার। এবং এর চারপাশে ১৬০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত এরিয়া ৫১ এরই নিজস্ব এলাকা। এটা জানা যায় যে, মূল এরিয়া ৫১ এর ভেতরটা বাইরে থেকে পর্যবেক্ষন করা খুবই কঠিন একটা কাজ। আপনাকে মূল এলাকাটিতে প্রবেশ করতে হলে হয়ত কয়েক ঘন্টা যাবত হাটতে হতে পারে।
ধরুন আপনি কয়েক ঘন্টা হাটলেন এবং সেখানে পৌছেও গেলেন, কি হবে তারপর? আপনি কি দেখতে পাবেন সেখানে? আসলে আমরা কেউই নিশ্চিতভাবে জানি না যে সেখানে কি রয়েছে, যা আমাদের এতো এতো বছর ধরে কন্সপিরেসি থিওরিগুলোর জন্ম দিয়েছে।
মাথানষ্ট সব সামরিক প্রযুক্তি, ইউএফও, এমনকি এলিয়েন সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য থাকলেও থাকতে পারে। কিন্তু এটা সত্য যে, আপনাকে সেসময় যেকোন পরিস্থিতির জন্য তৈরী হয়ে থাকতে হবে। নিউক্লিয়ার এক্সপেরিমেন্টের জন্য এলাকাটি বেশিরভাগ সময়ই দূষিত থাকে। তাই এসব ক্ষেত্রেও আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী সাথে না নিয়ে গেলে, রেডিয়েশনের ফলে আপনি অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন এমনিকি সেখানে আপনার মৃত্যু পর্যন্তও হতে পারে।
আসলে এই এরিয়া ৫১ সম্পর্কে আমরা কেউই কিছু জানি না। সর্বশেষ ২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো মার্কিন সরকার এর অস্তিত্বের কথা স্বীকার করে। এর বাইরে কোন তথ্যই আমরা নির্দিষ্ট করে জানতে পারি নি। তাই এরিয়া ৫১ নামক এই অজানা গন্তব্যে ঝড়ের গতিতে গিয়ে আক্রমণ করলেও এর ভালো কোন ফলাফল আসবে বলে মনে হয় না। তবুও কেউ যদি এর ভেতরে গিয়ে দেখে আসতে পারে যে ভেতরে কি চলছে তাহলে সে ই হয়ত পৃথিবীকে এই দীর্ঘ রহস্যজাল থেকে মুক্ত করতে পারবে। আপনার কি মনে হয়, এরিয়া ৫১ এ লাখ লাখ মানুষের একসাথে আক্রমণ করাটা কি যৌক্তিক? এর ফলাফল কি হতে পারে? জানতে চাই আপনার ব্যক্তিগত মতামত।
Source:
- https://whatifshow.com/what-if-one-million-people-actually-stormed-area-51/
- https://www.vox.com/the-highlight/2019/9/20/20864550/storm-area-51-matty-roberts-rachel-nevada-aliens-meme
- https://en.wikipedia.org/wiki/Area_51