কেমন হবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ?
মানবজাতির ইতিহাস যুদ্ধ-বিগ্রহের ইতিহাস। এসব যুদ্ধ দেখতে ছিল কোনটা বড় আবার কোনটা ছোট। কিন্তু যদি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়, তাহলে এটি হবে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বৃহত্তম যুদ্ধ।
উন্নত প্রযুক্তি, ক্ষমতাধর দেশগুলোর বিপুল সামরিক শক্তি আর অসাধারণ সব রণকৌশল, এসবের সবকিছুই উপস্থিত থাকবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে।
কিন্তু তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কেন হবে আর কোন কোন দেশগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকবে, কিংবা কোথায় কিভাবে সংঘটিত হতে পারে এ মহাযুদ্ধ, সেসব নিয়ে কি কখনো ভেবেছেন আপনি?
কয়েক দশক আগে, মানুষ সম্ভাব্য তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা করেছিল। এটি প্রায় 1960 এর দশকে, রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধের সময়কার ঘটনা, কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে সে যুদ্ধ আমরা আটকাতে পেরেছি।
কিন্তু পরেরবার হয়তো আমরা এ সুযোগটা নাও পেতে পারি।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঠিক কখন শুরু হতে পারে এটা ঠিক করে বলা কঠিন। বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা কোন দেশের প্রেসিডেন্টকে হত্যা, গোয়েন্দা হুমকি কিংবা কোন মূল্যবান সম্পদকে ঘিরে লড়াইয়ের সূত্রপাত হতে পারে, যা রূপ নিতে পারে বিশ্বযুদ্ধে।
সাধারনত যুদ্ধ শুরু হওয়ার পেছনে এসব কারনগুলোকেই দায়ী করা হয়। কিন্তু যুদ্ধের সূত্রপাত অনেক সময় আপনার ভাবনার চেয়েও তুচ্ছ কোন কারনে হতে পারে।
১৯৪৫ সালের পর থেকে পৃথিবী অনেকগুলো যুদ্ধ দেখেছে। এর মধ্যে ভিয়েতনাম যুদ্ধ, আফগানিস্তান যুদ্ধ, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সহ ডজনখানেক গৃহযুদ্ধের কথা উল্লেখ না করলেই নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, একটি বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পেছনে পৃথিবীর প্রায় সকল দেশের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশগ্রহন জরুরি। কিন্তু এসব যুদ্ধের সময়কালে একাধিক পরাশক্তির অংশগ্রহণ ছিল না বলে কোনটিই মহাযুদ্ধের রূপ নেয় নি।
তবে ১৯৪৫ সালের পর থেকে বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশের কাঠামোগত অনেক পরিবর্তন হয়েছে। দেশে দেশে সামরিক সক্ষমতা আগের চেয়েও অনেক বেশি দক্ষ ও শক্তিশালী হয়েছে।
তাই এখনকার সময়ে যদি কোন বিশ্বযুদ্ধ সংগঠিত হয়, তাহলে যত মানুষ মারা যাবে এবং যেসব ক্ষয়ক্ষতি হবে তা পুষিয়ে নিতে পৃথিবীর কয়েক দশক কিংবা শতাব্দী লেগে যেতে পারে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে বর্তমান সময়ে বিশ্বযুদ্ধ হলে একদমই আলাদা কিছু ঘটনার সাক্ষী হবে পৃথিবী। আগে যেমন মাটিতে কিংবা আকাশে যুদ্ধ হতো এখন সেই যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়বে সমুদ্রের গভীর থেকে মহাকাশ পর্যন্ত।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে সেনাবাহিনীদের মাটির উপরে থেকে সেরকমভাবে লড়তে হবে না। বরং কম্পিউটারের মাধ্যমে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে টার্গেট । ড্রোন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স আর রোবটের সাহায্যে করা হবে সেনাবাহিনীর অনেক কাজ।
ড্রোন দিয়ে চালানো হবে গোয়েন্দাবৃত্তি। সেনাবাহিনীর অল্টারনেটিভ হিসেবে ব্যবহার করা হবে রোবোকপ।
এই ব্যাপারগুলো আমাদের অনেকের কাছেই সাই-ফাই মুভির মতো মনে হচ্ছে, কিন্তু আমাদের জেনে রাখা উচিত এই অস্ত্রগুলো খুবই মারাত্মক এবং আশা রাখি কখোনই এগুলো ব্যবহারের প্রয়োজন পড়বে না। ভাবতে পারেন, এগুলো তৈরীই হয়েছে শুধুমাত্র মানুষ হত্যার জন্য।
আবার, লক্ষ লক্ষ প্রাণহানীর ফলে মানবিক বিপর্যয়ের বদলে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমেও সীমাবদ্ধ থাকতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। শত্রু দেশের রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রন কিংবা খনিজ সম্পদের দখল হতে পারে সমর যুদ্ধকৌশল।
এই যে বারবার খনিজ সম্পদের কথা বলছি, সেই সম্পদের অন্যতম উপকরণ কি হবে জানেন? শুধুই পানি । তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হতে পারে কেবল মাত্র খাবার পানির জন্যই, অবিশ্বাস্য হলেও কিন্তু এটাই সত্যি । তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যে পৃথিবীতে এখনো হয়নিই সেটার একমাত্র বড় কারণ হল, হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা হামলার ভয়াবহতা । তাই এমন ভয়াবহতা পৃথিবী আর সহ্য করতে পারবে না বলেই নানান সময়ে যুদ্ধের উত্তেজনা অবশান করে শান্তির পথে হেঁটেছে দেশগুলো ।
২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের উপর নিক্ষেপ করা পারমানবিক বোমা হামলায় ১ লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল। আক্রান্ত শহরগুলির রিকোভার করতে কয়েক দশক সময় লেগেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত দুটি পারমানবিক বোমা আমাদের আধুনিক বোমাগুলোর তুলনায় কিছুই না। আসলেই কিছুই না। আমেরিকা, রাশিয়া , চীনসহ অন্যান্য পরাশক্তিগুলোর কাছে এখন প্রায় ১৪,০০০ পারমানবিক বোমা আছে যেগুলো কিনা লিটল বয় কিংবা ফ্যাট ম্যান এর চেয়ে অনেক বেশি বিধ্বংসী আর শক্তিশালী ।
একটি দেশ যুদ্ধের প্রস্তুতি স্বরূপ সৈন্যবাহিনী তৈরী, তুখোর রণকৌশল ব্যবহার ইত্যাদি যাই করুক না কেন একটি পারমানবিক বোমা যদি সেখানে ফেলে দেয়া যায়, তাহলে সাথে সাথেই গেইম অভার। যদি একটি দেশ পরমানু বোমা নিক্ষেপ করে, তাহলে অন্য একটি দেশকে ঠিক একই কাজ করতে বাধা দেওয়ার কে আছে? তাই সেদেশও পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করবে। এরপর অন্য একটি দেশ। তারপর আরেকটি। আর এভাবেই ধীরে ধীরে পৃথিবী ধবংসের পথে এগিয়ে যাবে।
একটা শেষ প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়। কার বিজয় হবে এই যুদ্ধে? অবশ্যই কারোরই না। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ পুরো পৃথিবীতেই ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। এটা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, পৃথিবী আর কখোনই তার আগের অবস্থায় ফিরে আসবে না।
তবে এখনকার দেশগুলো একে অপরের থেকে অনেক বিচ্ছিন্ন। যদি দুটি দেশের মধ্যে যুদ্ধ বাধে তাহলে তৃতীয় পক্ষ সেভাবে আর এখন নাক গলায় না। আর এভাবেই হয়ত আমরা আরো অনেকগুলো বছর বিশ্বযুদ্ধ নামক শব্দটিকে এড়িয়ে যেতে পারবো।
Source:
- What If World War III Happened Tomorrow? | What If Show
- https://en.wikipedia.org/wiki/World_War_I
- https://en.wikipedia.org/wiki/World_War_II