ডার্ক ওয়েবঃ ইন্টারনেটের এক অন্ধকার জগৎ

তথ্যপ্রযুক্তির মহিমায় বিশাল এক ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে ইন্টারনেট। আর আজ তা আমাদের পৃথিবীর মতোই আলাদা একটি বিশাল মহাবিশ্বে পরিণত হয়েছে। পাল্টে দিয়েছে আমাদের জীবন যাত্রার পদ্ধতি। আর এর পেছনে কাজ করে যাচ্ছে ইন্টারনেট সার্ভার এ থাকা ওয়েবসাইটগুলো। এই ওয়েবসাইটগুলোর সংখ্যা কম করে হলেও হবে ২০০ কোটির উপরে। আপনি ওয়েব থেকে কোন কিছু জানতে চাইলে কি করবেন? গুগলে কিংবা অন্য কোনো সার্চ ইঞ্জিনে গিয়ে সার্চ করাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এমনও তো মাঝে মাঝে হয়, আপনি কোনো কি-ওয়ার্ড লিখে গুগলে সার্চ করলেন, কিন্তু সেটার সাথে খুব বেশি প্রাসঙ্গিক কিছু বের করে দিতে পারল না গুগল। তাহলে আপনি হয়ত ভেবেই নিয়েছেন যে, এরকম কোনো তথ্য ইন্টারনেটে নেই। কিন্তু সবসময় এরকম ভাবাটা কিন্তু ঠিক হবে না। জেনে অবাক হবেন যে, আপনি যখন কোন বিষয়ে সার্চ দেন আর গুগল তার লক্ষ লক্ষ ফলাফল আপনার সামনে হাজির করে তা ইন্টারনেটে থাকা মোট তথ্যের মাত্র মাত্র ৪%। অর্থাৎ গুগল ইন্টারনেটে থাকা মোট তথ্যের ৯৬ শতাংশই জানে না। আর ইন্টারনেটের লুকিয়ে থাকা এই ৯৬%  অন্ধকার জগতই ডিপ ওয়েব নামে পরিচিত। আর ডিপ ওয়েবের ভেতরে থাকা সবচেয়ে রহস্যময় ও ভয়ানক যে জায়গাটি রয়েছে সেটি হচ্ছে ডার্ক ওয়েব। 

ডীপ ওয়েব হল ইন্টারনেটের ওই সকল  এলাকা যেগুলো সার্চ ইঞ্জিন খুঁজে পায়না কিন্তু যদি আপনি সেগুলোর ঠিকানা জানেন তাহলে আপনি এগুলো তে প্রবেশ করতে পারবেন । 

আর ডার্ক ওয়েব হল ইন্টারনেটের ওই সকল এলাকা, যেখানে কনভেনশনাল উপায়ে আপনি ঢুকতে পারবেন না। প্রচলিত ব্রাউজারগুলো সেখানে প্রবেশ করতে পারেনা।  সেখানে প্রবেশ করতে আপনাকে বিশেষ এক সফটওয়্যার এর সাহায্য নিতে হবে । 

সহজে বোঝার জন্য আপনি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবকে কল্পনা করতে পারেন পানিতে ভাসমান একটি বরফখণ্ডের সাথে, যার সামান্য অংশ পানির উপরে ভেসে আছে এবং সেই অংশটুকু আপনি দেখতে পাচ্ছেন। অধিকাংশ বরফ কিন্তু পানির নিচেই আছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই পানির নিচে থাকায় অনেকটা অংশ আপনার কাছে অদৃশ্য। সে অংশটুকু দেখতে হলে যেতে হবে গভীরে। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের ব্যাপারটিও ঠিক এরকম। প্রচলিত সার্চ ইঞ্জিনগুলোর সাহায্যে আমরা শুধুমাত্র এর উপরের অংশটুকুই দেখতে পারি। আর উপরের এই ৪% অংশটুকুকে বলা হয় সারফেস ওয়েব।

প্রকৃতপক্ষে আপনি বা আমি কেউই ইন্টারনেটে একা নই।  আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ,  প্রতিটি ডাউনলোড নজর রাখে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার।  তাদের কাছে আপনার পুরো তথ্য থাকে আর যেকোন প্রয়োজনে তারা তা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সরবরাহ করে। তারমানে ইন্টারনেটে আপনার চলাচলের কোন স্বাধীনতা নেই। যতই আমরা আমাদের একাউন্টগুলোকে পাসওয়ার্ড দিয়ে প্রটেক্টেড করে রাখি না কেনো তবুও নয়। আর এক্ষেত্রে নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করতে হয় ইন্টারনেটের আরেক জগত ডার্ক ওয়েব। 

ইন্টারনেটের এই অংশটুকুর উৎপত্তি হলো  কিভাবে? 

বিভিন্ন সময়ে বিশ্ব ইন্টারনেট এর নানা গ্রুপ এমন একটি ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিল যেখানে তারা তাদের কর্মকাণ্ড গোপনে পরিচালনা করতে পারবে।  সামরিকবাহিনী, বিপ্লবী, হ্যাকার এমনকি প্রশাসন নিজেই এমন এক ব্যবস্থা চেয়েছে যেখানে গোয়েন্দারা খুব গোপনে নিজেদের ভেতর তথ্য আদান-প্রদান করতে পারবে। তাছাড়া বিশ্বের যেসব দেশে অনলাইন সেন্সরশিপ খুবই কড়াকড়ি,  সেসব দেশে ভিন্ন মতাবলম্বীদের চিন্তা করতে হয়েছে এমন একটি প্লাটফর্মের যেখানে সরকার নিজেও কোন তদারকি করতে পারবে না। এবং সকল ধরনের সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা যাবে আড়ালে থেকে।  আর এসব থেকে উৎপত্তি হয়েছে অজানা এক রহস্যময়  জগত ডার্ক ওয়েবের। 

স্বাভাবিকভাবেই আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে, তাহলে যদি এই ডার্ক ওয়েব এতটাই বিপদজনক হয়ে থাকে তাহলে কোন সরকারি সংস্থা এটা বন্ধ করে কেন দিচ্ছে না। আর আমার আপনার মতো সাধারন মানুষদের এই ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে ভয় পাওয়ার কারণটাই বা কি? 

তার আগে চলুন জানা যাক ইন্টারনেটের বিশাল এই অংশের নাগাল কোন সার্চ ইঞ্জিন কেন পাচ্ছে না। 

ডিপ ওয়েবে সেসকল তথ্য থাকে যেগুলো আপনি সরাসরি এক্সেস করতে পারেন না। তার মানে সেসকল ওয়েবপেজ গুলো সার্চ ইঞ্জিনের সাথে ইনডেক্স করা নেই। অর্থাৎ গুগলে সার্চ করে আপনি সেগুলো খুঁজে পাবেন না। এরকম ওয়েবসাইট নরমাল সারফেস ওয়েবেও অনেক রয়েছে যেগুলো আপনি গুগল সার্চে খুজে পাবেন না। এসব সাইটে সাধারনত সরকারী তথ্য, আইডি সংক্রান্ত, পাসপোর্ট সংক্রান্ত তথ্য লক করা থাকে। জেনে রাখা ভালো যে, আমাদের বাসার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারের সার্ভারগুলোও ইনডেক্স করা থাকে না। অর্থাৎ আমরা এগুলোকে গুগল সার্চে খুজে পাবো না। আপনি যখন গুগলে গিয়ে কোনো কিছু সার্চ করেন, তখন মনে রাখবেন যে, আপনি কিন্তু পুরো ওয়েবে সার্চ করছেন না। আপনি সার্চ করছেন শুধুমাত্র গুগলের ইনডেক্সে। যার ফলে সেই ইনডেক্সে তথ্য থাকলেই গুগল আপনাকে যথাযথ তথ্য দিতে পারবে, নইলে পারবে না!  প্রত্যেকটা বড় বড় কোম্পানি এবং গবেষণা সংস্থা তাদের গোপন তথ্য গুলো বিভিন্ন সার্ভারে সেভ করে রাখে- যেগুলো আমরা নরমাল ওয়েবে খুজে পাবো না। আর এসকল ওয়েবসাইটগুলোকেই ডিপ ওয়েব বলে। এর থেকেও গভীরে রয়েছে ডার্ক ওয়েব। 

ডার্ক ওয়েবে থাকা তথ্যগুলো দৃশ্যমান সারফেস ওয়েবের তথ্য থেকে গুণে, মানে অনেক উন্নত। এগুলো খুবই প্রাসঙ্গিক, যুক্তিসম্পন্ন এবং সুসজ্জিত। তাহলে চিন্তা করুন আমাদের চোখের সামনে দৃশ্যমান যে ইন্টারনেট জগত আছে তারা কি করছে? 

কিন্তু আপনি চাইলেও আপনার প্রচলিত ব্রাউজার দিয়ে এই সমস্ত সাইটে ঢুকতে পারবেন না। এরা ইন্টারনেটের সকল নিয়ম কানুনের বাইরে অবস্থান করে । আর এদের ঠিকানা এতটাই উদ্ভট হয় যে সাধারণ মানুষের পক্ষে এগুলোকে মনে রাখা ভীষণ কঠিন। 

এখানে যে লেখাটি আপনি দেখতে পাচ্ছেন এটি কিবোর্ড দিয়ে ভুল করে টাইপ করা কোন এলোমেলো অক্ষর নয় বরং এটি ডার্ক ওয়েবের একটি সাইটের ঠিকানা। ইন্টারনেটের এই অংশগুলি প্রকৃত অদৃশ্য অংশ। এই অংশের বিশেষত্ব হলো এরা world-wide-web এর সাইট গুলোর মত টপ লেভেল ডোমেইন যেমন ডটকম, ডট নেট, ডট org,  ডট বিডি, ডট ইন, ইত্যাদি ব্যবহার না করে সিউডো টপ-লেভেল ডোমেইন ব্যবহার করে।  যেটি মূলত ওয়েবে না থেকে দ্বিতীয় আরেকটি নেটওয়ার্কের অধীনে থাকে। এরকমই একটি বিখ্যাত ডোমেইন হচ্ছে ডট অনিয়ন। 

ইন্টারনেটের এই জগৎটা আমাদের দৃশ্যমান ইন্টারনেটের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।  আপনি জীবনে যা কখনো কল্পনা করেন নি তাই দেখতে পাবেন এখানে। এমন সব বিষয় পাবেন যা আপনার মাথাও গুলিয়ে দিতে পারে। আমরা যেসব তথ্যের আপডেট ইন্টারনেটে আজ পাচ্ছি, ডার্ক ওয়েবে তা আরো আগেই লিক হয়ে গিয়েছে। নিষিদ্ধ বই কিংবা সিনেমা যেগুলো কিনা সারফেস ওয়েব থেকে কোনভাবেই পাওয়া সম্ভব নয় সেগুলো আপনি খুব সহজেই ডার্ক ওয়েব থেকে কিনতে পারবেন। 

বিভিন্ন কুরূচিপূর্ণ বিনোদন, যেমন- শিশু পর্নোগ্রাগ্রাফি, বিকৃত যৌনাচার, মানুষকে টরচারের লাইভ স্ট্রিম , ইত্যাদি বিষয়গুলো সেখানকার হট টপিক। 

এমন কিছু সাইট আছে যেগুলো প্রিমিয়াম কোয়ালিটির ড্রাগ কেনাবেচার জন্য খুবই বিখ্যাত। আর বেশিরভাগ মাদকাসক্তরাই এদের রেগুলার কাষ্টমার। 

বিভিন্ন জঙ্গি সংস্থা, গোপন গোষ্ঠির গোলাবারুদ বানানোর প্রশিক্ষণকেন্দ্র, রেডিমেড অস্ত্রসস্ত্র, রকেট লঞ্চারের ক্রয় বিক্রয় ইত্যাদি বিষয়গুলো সেখানে হরহামেশাই ঘটে থাকে। 

আশ্চর্য হওয়ার মতো ঘটনা এখনো শেষ হয় নি! ডার্ক ওয়েবে এমন কিছু সাইট রয়েছে যেগুলো থেকে আপনি কিলার, চোর, ডাকাত সব ভাড়া করতে পারবেন। কাজ হয়ে যাওয়ার পর সে প্রমানস্বরূপ আপনার কাজের ছবি পাঠিয়ে দিবে। 

অনেক দেশের ইন্টারনেট আইন খুবই কড়াকড়ি। তাই বিভিন্ন দেশের জানার্লিস্ট এবং রিসার্চাররা মুক্ত উপায়ে তাদের রিসার্চের কর্মকান্ড ডার্ক ওয়েবে গিয়ে সম্পন্ন করেন। 

এছাড়াও ডার্ক ওয়েবের সবচেয়ে বড় ব্ল্যাক মার্কেটপ্লেস সিল্ক রোডে পাবেন- মানুষের চামড়ায় তৈরী ওয়ালেট, বেল্ট, ২০ হাজার ডলারের বিনিময়ে আমেরিকান সিটিজেনশীপ, বিভিন্ন বড়ো বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেইক গ্রাজুয়েশন সার্টিফিকেট, নেটফ্লিক্সের লাইফটাইম সাবস্ক্রিপশন, ৮০% ডিসকাউন্টে আইফোনের লেটেস্ট মডেল এরকম আরো অনেক কিছু যেগুলো আপনি কখনো কল্পনাও করেননি। 

মোটকথা আপনি এমন একটি অন্ধকার জগতে প্রবেশ করবেন, যেখানে আপনাকে প্রতিটি পদক্ষেপ ফেলার আগে দুইবার ভেবে নিতে হবে। সারফেস ওয়েবে যেসব হ্যাকিং টেকনিক দেখতে পান সেগুলো ডার্ক ওয়েব থেকে লিক হওয়া মাত্র  1% তথ্যের অংশবিশেষ। এখানকার হ্যাকাররা খুবই ভয়ঙ্কর এবং ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করার পর আপনার যেকোন তথ্য এক তুড়িতেই হ্যাক করে নিয়ে যেতে পারে এরা । 

ডার্ক ওয়েবের এসব অবৈধ কর্মকান্ড দেখে আপনার মনে হতে পারে যে, এটা কোন ইল্লিগ্যাল সংস্থা দ্বারা তৈরী হয়েছে। কিন্তু আসলে তা নয়। ডিপ ওয়েব প্রজেক্ট বানানো শুরু  করেছিল ইউএস মিলিটারি। এটা তাদের  নিজেদের মধ্যে গোপনে কথাবার্তা বা তথ্য আদান-প্রদানের জন্য তৈরি করেছিল । ১৯৯৫ সালে নেভাল রিসার্চ ল্যাবরেটরির কিছু গণিতবিদরা প্রথম অনিয়ন রাউটিং এর উপর কাজ করা শুরু করে। তাদের রিসার্চের ফলে এমন একটি প্রোডাক্ট তৈরি হয় যাকে আমরা অনিয়ন রাউটিং বলে থাকি। অর্থাৎ টর ব্রাউজার। এই প্রযুক্তির ফান্ডিং করেছিল DARPA অর্থাৎ Defense Advanced Research Project Agency

ডার্ক ওয়েবে যেতে হলে আপনাকে এই টর ব্রাউজারকেই ব্যাবহার করতে হবে যেটা আপনি গুগলেই এভাইল্যাবল পেয়ে যাবেন। এটা আপনার সকল ধরনের আইডেন্টিটিকে ব্লক করে রাখে। অর্থাৎ এটা ব্যবহার করার সময় আপনি এক দেশ থেকে আরেক দেশে ছুটতে থাকবেন। কেউ ট্র্যাক করতে চাইলে কখনো দেখাবে আপনি আমেরিকাতে আছেন, কখনো দেখাবে সিঙ্গাপুরে আবার কখনো দেখবেন আপনি বাংলাদেশে। অর্থাৎ ট্রেস করা খুবই কঠিন হয়ে যাবে। তবে সবক্ষেত্রে নয়। ডার্ক ওয়েবে নিজের নিরাপত্তার থেকে ঝুঁকির পরিমানটাই বেশি। 

এবার তাহলে আলোচনা করা যাক, সরকারগুলো এই ডার্ক ওয়েবকে বন্ধ করে কেন দিচ্ছে না। 

এটা জানতে হলে আপনাদের জানতে হবে, ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করার জন্য যে ব্রাউজার ব্যবহার করতে হয় সেই ব্রাউজার অর্থাৎ টর ব্রাউজার u.s. ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রকাশ্যে কেন উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। যখন ইউএস মিলিটারি টর ব্রাউজার ব্যবহার করতে শুরু করেছিল তখন এই ব্রাউজারে খুব অল্প পরিমাণে ইউজার ছিল। সুতরাং তাদেরকে ট্র্যাক করা খুব সোজা হয়ে গিয়েছিল। তারপর তারা বুঝতে পারে যে, এই ব্রাউজারে যদি আরো বেশি ইউজার হয়, তাহলে তাদেরকে ট্র্যাক করা অনেক কঠিন হয়ে যাবে।সেজন্য তারা টর ব্রাউজারকে উন্মুক্ত করে দেয়। 

এছাড়াও আরো অনেক কারণ আছে, যেসব কারনে ডার্ক ওয়েবকে বন্ধ করা সম্ভব নয়। সেসবের মধ্যে প্রধান কিছু কারন আপনাদের কাছে তুলে ধরছি।

এ ব্যাপারে আপনার কিছু বলার অধিকার নেই

আমেরিকার সরকার যখন টর ব্রাউজারকে উন্মুক্ত করে দিয়েছিল, তখন সেই ব্রাউজার এমন সব দেশে ব্যবহার করা শুরু হয় যেসব দেশে আমেরিকা সরকারের কোন আইনত অধিকার নেই। তাই সেদেশ থেকে কোন অবৈধ কর্মকান্ড ঘটলেও সেটা us গভর্নমেন্ট থেকে কিছু করার অধিকার রাখে না, যদি সেদেশের আইনে সে কাজটা সেদেশে বৈধ থাকে। সর্বোচ্চ তারা তাদের কানেশনকে ব্লক করে দিতে পারে। এর বেশি কিছু নয়। 

ডার্ক ওয়েবে তারা নিজেদেরকে খুব ভালোভাবেই লুকিয়ে রেখেছে।

আসলে যারা ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করে থাকে তারা বিভিন্ন সফটওয়্যার এর পেছনে লুকিয়ে থাকে। তাদেরকে সনাক্ত করা খুবই কঠিন কাজ। 

সময় এবং অর্থের অপচয়

নির্দিষ্টভাবে যদি আপনি একটি সংস্থার ক্ষেত্রেও নজরদারি করতে চান, তাহলেও আপনার প্রচুর সময় এবং টাকা খরচ করতে হবে। আর ডার্ক ওয়েবে এরকম হাজারো হাজারো অবৈধ সংস্থা আছে যাদের সবাইকে একসাথে ক্র্যাকডাউন করাটা খুবই কঠিন একটি কাজ এবং সেই সাথে ব্যয়বহুলও বটে। 

যে কারনটি রয়েছে সেটি হচ্ছে নিরাপত্তা।

ডার্ক ওয়েবে যে শুধু অবৈধ কাজকর্মই হয় এমনটা কিন্তু ভুল। অনেকে মানুষ আছে যারা ইন্টারনেটে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে অনেক ভয়ের মধ্যে থাকেন।  সেসকল মানুষেরাও ডার্ক ওয়েবের টর ব্রাউজার ব্যবহার করে থাকেন।

ট্র্যাক করার ক্ষমতা নেই

ডার্ক ওয়েবে আপনি কারো পেমেন্টকেও ট্র্যাক করতে পারবেন না। কারণ ওখানে কার্ড বা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কিছুর পেমেন্ট করা যায় না। তাই ব্যবহার করতে হয় ক্রিপ্টোকারেন্সি বা বিটকয়েক। যেটাকে ট্র্যাক করা একেবারে অসম্ভব। যারা বিটকয়েন সম্পর্কে জানেন না শুধু এটুকু জেনে রাখুন যে, ১ বিটকয়েন সমান বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫০লক্ষ টাকা। আর এই বিটকয়েনের মূল্য সবসময়ই উঠানামা করে। 

সারফেস ওয়েব বা আমরা ব্যবহার করি যে দৃশ্যমান ওয়েব এখানে কোন কিছুই নিরাপদ নয়। কোন  বুদ্ধিমান হ্যাকার চাইলেই আমাদের সকল তথ্যগুলিকে হ্যাক করে নিয়ে যেতে পারে। আর এ কারনেই কিছু মানুষ ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে ইন্টারনেট একসেস করে থাকে। 

ডার্ক ওয়েব যে শুধুমাত্র ক্রিমিনাল এবং খারাপ লোকেরা ব্যবহার করে এমনটা নয়।  বিভিন্ন বড় বড় সংস্থা, রিসার্চ অর্গানাইজেশ্‌ন,  সরকারি বিভিন্ন ডকুমেন্ট, ইত্যাদি বিভিন্ন তথ্য ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে লুকিয়ে রাখা হয়।  যা আসলে অবৈধ নয়। আর এসব কারনেই ডার্ক ওয়েবকে কখনো পারমানেন্টলি বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব নয়।

তবে ডার্ক ওয়েবের সবচেয়ে বড় ব্ল্যাক মার্কেটপ্লেস “সিল্করুট” কে ২০১৩ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল এবং সেইসাথে সিল্ক রুটের যত কাস্টমার ছিল তাদের সবাইকে সেখান থেকে অবৈধ প্রোডাক্ট ক্রয় করার অপরাধে আটক করা হয়েছিল। তবুও কি কিছুতে কোন কিছু কমেছে? না। বরং ডার্ক ওয়েবে থাকা ব্ল্যাক মার্কেটের কালোবাজারি চলছে দেদারসে এবং আরো ব্যাপকভাবে। 

এতোকিছু জানার পর আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন, একবার সেখান থেকে ঢু মেরে আসা যায় কিনা। 

ডার্ক ওয়েব হল সব বড় বড় ক্রিমিনালদের আড্ডাখানা এবং ক্রাইমের স্বর্গরাজ্য।এমন কোন খারাপ বা অবৈধ কাজ নেই যা সেখানে হয় না।সেই দুনিয়া সম্পর্কে আমরা সাধারণ মানুষেরা পুরোটাই অজ্ঞ এবং আমাদের কল্পনারও বাইরে। তবুও আপনি যদি সেখানে প্রবেশ করতে চান তাহলে বিশেষ কিছু জ্ঞান যেমন- প্রোগ্রামিং, নেটওয়ার্কিং, প্রক্সি ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নেবেন। তবে হ্যাঁ- অবশ্যই নিজের রিস্কে।